ঘুমিয়ো নাকো আর
বিমল চন্দ্র ঘোষ
রূপকথাটি জড়িয়ে বুকে খোকন ঘুমে মগ্ন
স্বপ্ন ! স্বপ্ন ! স্বপ্ন !
আসছে যাচ্ছে কল্পলোকের হরেক রকম মানুষ
কেউ মাটিতে হেঁটেই চলে কেউ বা চড়ে ফানুস ,
কারুর চোখে চশমা আঁটা , কারুর মুখে দাড়ি ,
হাসলে কারও বেরিয়ে পড়ে ফোকলা দাঁতের মাড়ি !
একটু পরেই সব চুপচাপ কেউ কোত্থাও নেই ,
স্বপ্নবুড়ি চরকা থামায় হারায় সুতোর খেই ;
চাঁদের আলোয় দিগন্তহীন তেপান্তরের মাঠ ,
জনমানুষের নেইকো দেখা বিষণ্ণ পথঘাট ।
ঝিম্ ঝিম্ ঝিম্ ঝিঁঝির ঝিঁঝির ঝিল্লিরা সব ডাকে ,
নিঝুম রাতে হুতুম চেঁচায় হঠাৎ অশথ - শাখে ।
স্বপ্ন ! স্বপ্ন ! স্বপ্ন !
রূপকথাটি আঁকড়ে বুকে খোকন ঘুমে মগ্ন ।
জানলা দিয়ে মুখটি বাড়ায় রাজপুত্রের ঘোড়া
মুক্তা গাঁথা ঝালর মাথায় হিরের লাগাম মোড়া ,
ডাগর চোখে বলছে , ‘ খোকা ঘুমিয়ো নাকো আর ,
পিঠের ওপর বসিয়ে তোমায় ছুটব সাগর - পার ,
কড়ির পাহাড় , হাড়ের পাহাড় পেরিয়ে অচিন দেশে
রূপকুমারীর রাজ্যে তোমায় পৌঁছে দেব শেষে । '
স্বপ্ন ! স্বপ্ন ! স্বপ্ন !
থমথমে রূপকথার দেশে খোকন ঘুমে মগ্ন ।
১) একটি বাক্যে উত্তর দাও :-
১.১) কে বুকে রূপকথা জড়িয়ে ঘুমে মগ্ন ?
উত্তর :- খোকন বুকে রূপকথা জড়িয়ে ঘুমে মগ্ন।
১.২ ) ‘ কল্পলোক ’ মানে কী ?
উত্তর :- কল্পনার পৃথিবী।
১.৩) কল্পলোকের মানুষদের বর্ণনা দাও ।
উত্তর :- কল্পলোকের মানুষেরা হরেক রকম।
১.৪) কে চরকা কাটে ?
উত্তর :- স্বপ্নবুড়ি চরকা কাটে।
১.৫) দিগন্তহীন মাঠটির নাম কী ?
উত্তর :- তেপান্তরের মাঠ।
১.৬) ঝিল্লিরা কীভাবে ডাকে ?
উত্তর :- ঝিম ঝিম ঝিম ঝিঁঝির ঝিঁঝির।
১.৭) নিঝুমরাতে অশথ - শাখে কে চেঁচায় ?
উত্তর :- হুতুম চেঁচায়।
১.৮) জানলা দিয়ে কে মুখ বাড়ায় ?
উত্তর :- জানালা দিয়ে মুখ বাড়ায় রাজপুত্রের ঘোড়া।
১.৯) তার সাজ - পোশাক কী রকম ?
উত্তর :- মুক্তা গাঁথা ঝালর মাথায় আর হিরের লাগাম মোড়া।
১.১০) কে , কাকে পিঠের উপর বসিয়ে কোথায় নিয়ে যেতে চায় ?
উত্তর :- রাজপুত্রের ঘোড়া, খোকনকে, রুপকুমারীর রাজ্যে নিয়ে যেতে চায়।
১.১১ ) কড়ির পাহাড় , হাড়ের পাহাড় পেরিয়ে কোন দেশ ?
উত্তর :- অচিন দেশ।
১.১২) সেখানে কে থাকে ?
উত্তর :- রুপকুমারী।
শব্দার্থ :- মগ্ন - ডুবে আছে যে , তলিয়ে গেছে যে ।
কল্পলোক - কল্পনার পৃথিবী ।
ফানুস - কাগজের তৈরি বেলুন, যা তপ্ত ধোঁয়া বা গ্যাসের সাহায্যে আকাশে ওড়ানো হয়।
ফোকলা - যার দাঁত নেই , দন্তহীন ।
চরকা - সুতো কাটার যন্ত্র ।
খেই – প্রান্ত , শেষ ।
দিগন্ত - আকাশ ও পৃথিবীর মিলনস্থল , দিকচক্রবাল ।
দিগন্তহীন - বিস্তীর্ণ , বিশাল ।
তেপান্তরের মাঠ - রূপকথায় বর্ণিত বিরাট মাঠ ।
বিষণ্ণ - বিষাদগ্রস্ত , দুঃখী ।
ঝিল্লি – ঝিঁঝি ।
নিঝুম – নিঃশব্দ ।
হুতুম পেঁচা ।
অশথ - শাখে –- অশ্বত্থ গাছের ডালে ।
ঝালর - কাপড়ের তৈরি জিনিসের কারুকার্যময় ও কোঁচকানো প্রান্তভাগ ।
লাগাম - ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে বাঁধা দড়ি , রশি ।
ডাগর – বড়ো বড়ো ।
কড়ি – একরকম সামুদ্রিক প্রাণীর দেহাবশেষ , আগে মুদ্রা হিসাবে ব্যবহৃত হতো ।
অচিন – অচেনা , অজানা ।
২. শব্দঝুড়ি থেকে উপযুক্ত শব্দ নিয়ে শূন্যস্থানে বসাও :
* হুতুম, খোকন, চশমা, ঝালর, চরকা।
২.১) কারুর চোখে__________ আঁটা , কারুর মুখে দাড়ি ।
উত্তর :- চশমা।
২.২) স্বপ্নবুড়ি ____________ থামায় হারায় সুতোর খেই ।
উত্তর :- চরকা।
২.৩) নিঝুম রাতে _____________ চেঁচায় হঠাৎ অশুথ-শাখে।
উত্তর :- হুতুম।
২.৪) মুক্তা গাঁথা ____________ মাথায় হিরের লাগাম মোড়া।
উত্তর :- ঝালর।
২.৫) থমথমে রূপকথার দেশে _______ ঘুমে মগ্ন।
উত্তর :- খোকন।
৩) 'ক' স্তম্ভের সঙ্গে 'খ' স্তম্ভ মেলাও :-
উত্তর :- তেপান্তর - মাঠ।
কড়ি - পাহাড়।
চোখ - চশমা।
অশথ - শাখা।
অচিন - দেশ।
৪. এই কবিতায় যে সমস্ত শব্দজোড়ে ছন্দের মিল আছে তার মতো অন্তত পাঁচটি জোড়া খুঁজে লেখো ( একটি করে দেওয়া হলো ) :
উত্তর :-
১) মানুষ
ফানুস।
২) দাড়ি
মাড়ি।
৩) নেই
খেই।
৪) মাঠ
ঘাট।
৫) ঘোড়া
মোড়া।
বিমলচন্দ্র ঘোষের জীবনী :-
বিমলচন্দ্র ঘোষ ( ১৯১০-১৯৮১ ) ; বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার । তাঁর কবিতার বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ জীবন ও রাত্রি ’ , ‘ সাবিত্রী ’ , ‘ উদাত্ত ভারত ' । ' ‘ উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা ' , ' শোনো বন্ধু শোনো , প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা'র মতো বিখ্যাত গান তিনি রচনা করেছেন ।
Comments